দৃষ্টিহীন কিশোরের গায়ক হবার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে এলো তিন সংগীত প্রেমী

29th December 2020 6:44 pm বর্ধমান
দৃষ্টিহীন কিশোরের গায়ক হবার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে এলো তিন সংগীত প্রেমী


প্রদীপ চট্টোপাধ‍্যায় ( বর্ধমান ) :  দৃষ্টিহীন কিশোর মহঃ হায়দার আলির স্বপ্ন গয়ক হবার ।কিন্তু পরিবারিক দারিদ্রতা কিশোরের সেই স্বপ্নপূরণে অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে ।সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোনি বলে  ছেলেকে একটা হারমোনিআমও কিনেদিতে পারেননি বাবা শেখ আনসার আলি।সুরেলা কন্ঠে গান গেয়েই মনের এই দুঃখের কথা সবাইকে শোনাতো  হায়দার ।গায়ক হবার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টিহীন এক কিশোরের সেই বেদনাভরা গান ব্যাথিক করেছিল হাবড়ার অশোকনগর নিবাসী সংগীত প্রেমী  রিয়া রুবি মহাশয়াকে । তাই তিনি নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান বাতিল করেদিয়ে সেই  অর্থে হায়দারকে কিনেদিলেন নতুন একটি হারমোনিয়াম।নতুন হারমোনিয়াম পেয়ে এখন আনন্দে আত্মহারা দৃষ্টিহীন হায়দার । সে জানিয়েছে ,এবার তাঁর কাজ হবে হারমোনিয়ামের শুরে শুর মিলিয়ে গানের জগৎতে নিজেকে মেলে ধরা ।  দৃষ্টিহীন কিশোর হায়দারের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার আলুটিয়ার গ্রামে। হায়দারের বাবা শেখ আনসার আলি পেশায় রাজমিস্ত্রী । মা হাফিজা বেগম সাধারণ গৃহবধূ । হায়দাররা তিন ভাই ,তিন বোন । বড় দুই দিদির বিয়ে হয়েগেছে ।ছোট দিদি মোমিনা  খাতুনের এখনও বিয়ে হয়নি ।এক দাদা ও বাবার সামান্য রোজগারেই হায়দারদের পরিবারের সকলের অন্নসংস্থান হয় ।  আনসার আলি জানিয়েছেন , তাঁর ছেলে হায়দারের বর্তমান বয়স চোদ্দ বছর । ছোট থেকেই সে দৃষ্টিহীন ।আনসার আলি জানান , অনেক ছোট বয়স থেকেই গান বাজনার প্রতি  হায়দারের আকর্ষন বাড়তে থাকে ।ওই সময়ে ছেলে কান্নাকাটি শুরু করলে ওকে রেডিওয় গান  শোনালেই কান্নাকাটি বন্ধ হয়েযেত । পরে একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে হায়দার নিজের মনে মনেই গানগাইতে শুরু করে । এখন মোবাইলে বিভিন্ন শিল্পির কন্ঠে গান শুনে তা আয়ত্ত করেনিয়ে হায়দার নিজেই  সুমধুর কন্ঠে সেই গান গায়। আনসার আলি বলেন ,গান শেখার জন্য ছেলের যে একটা হারমোনিয়ামের প্রয়োজন তা তিনি বোঝেন  । ছেলেও  দীর্ঘদিন ধরে তাঁর কাছে একটা হারমোনিয়াম কিনে দেবার আবদার করে আসছিল ।কিন্তু অভাব অনটনের কারণে  তিনি গান শেখার জন্য ছেলেকে একটা হারমোনিয়াম কিনেদিতে পারেননি ।গানের তালিম নেবার জন্য ছেলেকে কোন সংগীত গুরুর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থাও করতে পারেন নি । তবুও ছেলে হায়দার  হাল ছাড়েনি । নিজের প্রচেষ্টাতেই চর্চা চালিয়ে গিয়ে  হায়দার দু'তিনটে বড় রিয়ালিটি শোয়ে গানের অডিশন দিয়েছিল । কিন্তু উপযুক্ত তালিমের অভাবে ছেলেকে  পিছিয়ে আসতে হয়েছিল । আনসার আলি বলেন , তিনি না পারলেও তাঁর ছেলের  হারমোনিয়ামের  আবদার পূরণ করে দিলেন  হবড়ার অশোকনগর নিবাসী সংগীত প্রেমী রিয়া রুবি মহাশয়া।আনসার অলি জানালেন  , রিয়া  রুবি মহাশয়ার দেওয়া  হারমোনিয়াম কে অাঁকড়েই হয়তো আগামীদিন তাঁর ছেলে হায়দারের গায়ক হবার স্বপন পূরণ হবে । সংগীত প্রেমী রিয়া রুবি মঙ্গলবার জানান , একটা হারমোনিয়ামের জন্য গায়ক হবার স্বপ্নে বিভোর হায়দারের আকুতি তাঁকে ব্যাথিত করেছিল । তাই হায়দারের ইচ্ছা পূরণের জন্য 
নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান বাতিল করেদিয়ে তার অর্থে তিনি একটি নতুন হারমোনিয়াম কেনেন । এছাড়াও পূর্ব বর্ধমানের গলসি নিবাসী তাঁর গুনমুগ্ধ আজিজুর রহমান ও লালন শেখ নতুন জামা কাপড় ও বেশকিছু খাদ্যসামগ্রী হায়দারের পরিবারের জন্য কেনে । তারাই সোমবার নতুন হারমোনিয়াম সহ ওই কিছু হায়দারদের বাড়িতে পৌছে দিয়েছে ।  রিয়াদেবী জানিয়েছেন , দৃষ্টিহীন কিশোর হায়দারের গায়ক হবার স্বপ্ন পূরণ হোক ঈশ্বরের কাছে সেই প্রার্থনাই তিনি জানাবেন । 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।